বিশ্বে চিরাচরিত যে শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল এবং অর্থনৈতিকভাবে পৃথিবী বিগত দশকগুলোতে যে অগ্রগতির ধারায় এগুচ্ছিল, প্রাণঘাতী করোনার কারণে তার নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে। দীর্ঘকালের ধারাবাহিকতায় শিক্ষা ব্যবস্থার ধরন ও স্বরূপ বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। এই মহামারীতে বিকলাঙ্গ হয়েছে বিশ্ব শিক্ষাব্যবস্থা। আর মাসের পর মাস স্কুল বন্ধ থাকায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে ৬১ কোটি ৬০ লাখ শিক্ষার্থীর জীবন। এমনই ভয়ঙ্কর তথ্য দিয়েছে ইউনিসেফ।

প্রায় দু’বছর ধরে একপ্রকার বন্ধই রয়েছে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের স্কুল-কলেজ। মাঝে কিছুদিনের জন্য খুললেও করোনার প্রকোপ বাড়ায় ফের বন্ধ করে দেয়া হয়। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ গোটা বিশ্বেই করোনার কারণে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এদিকে, এরফলে অনলাইন ক্লাসে অভ্যস্ত হচ্ছে শিশুরা। শিক্ষাব্যবস্থাও হয়ে উঠছে অ্যাপ নির্ভর। হারিয়ে যাচ্ছে স্কুলের জীবন। বাচ্চাদের মানসিক স্বাস্থ্য কী পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে তা বলে বোঝানোর নয়, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ইউনিসেফ জানিয়েছে, অবিলম্বে সকল বিধি মেনে স্কুল খুলে দেয়া উচিৎ। তা না হলে গোটা শিক্ষাব্যবস্থাই প্রতিবন্ধকতার শিকার হবে বলে মনে করছে বিশ্বের শিক্ষাবিদরা। এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘসময় স্কুল বন্ধ থাকায় ৬১ কোটির বেশি ছাত্র চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে। হিসেবে দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে ১০ শতাংশের বেশি ছাত্রছাত্রী লিখতে-পড়তেই ভুলে গেছে। আর নিম্নসমাজে এর প্রভাব পড়েছে বেশি। ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ শিশু আর স্কুলমুখো হতে চাইছে না। পড়াশোনাতেও আগ্রহ হারাচ্ছে তারা।

ইউনিসেফের শিক্ষা বিষয়ক প্রধান রবার্ট জেনকিন্স বলেছেন, ‘শিশুদের পড়াশোনায় অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তবে পড়াশোনার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার অবসান ঘটাতে হবে এবং শুধু স্কুল খুলে দেয়া এক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। পড়াশোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করতে হবে শিক্ষকদেরই। পাশাপাশি, বাচ্চাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, পুষ্টি, বিকাশ সবদিকেই লক্ষ্য রাখতে হবে। নতুন কর্মসূচী নিয়ে এগোতে হবে।

এখন যে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, তা অনেক আগেই আলোচনা ও নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে বাস্তবায়িত করা উচিত ছিল। কিন্তু সেসবের কিছুই হয়নি। তার ফলে যে ক্ষতি ইতিমধ্যেই ঘটেছে, তার পরিণাম পাবে ভবিষ্যৎ
ইউনিসেফ

শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, প্রশ্নটা নিছক স্কুল খোলার বা না-খোলার নয়। নানা বিকল্প উদ্যোগে কিভাবে লেখাপড়াটা যতটা সম্ভব চালিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, সেজন্য নানা দিক থেকে পরিকল্পনা করা জরুরি ছিল, সেই সঙ্গে জরুরি ছিল সমাজের বিভিন্ন স্তরে সেই পরিকল্পনা রূপায়ণের। এখন যে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, তা অনেক আগেই আলোচনা ও নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে বাস্তবায়িত করা উচিত ছিল। কিন্তু সেসবের কিছুই হয়নি। তার ফলে যে ক্ষতি ইতিমধ্যেই ঘটেছে, তার পরিণাম পাবে ভবিষ্যৎ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের উপকারই হবে। একা একা নয়, একসঙ্গে বেড়ে ওঠে শিশুরা। আপাতত আগামী কয়েক বছর হয়তো করোনা নিয়েই চলতে হবে আমাদের। দ্রুত এটিকে রপ্ত করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে হবে। আমজনতার অসাবধানতা এবং ভাইরাসের চরিত্র বদলে যাওয়ায় ঢেউ এরপর ঢেউ তো আসতেই পারে, কিন্তু তাই বলে শিশুদের শৈশব নষ্ট হতে দেয়া যাবে না।